Brands
Discover
Events
Newsletter
More

Follow Us

twitterfacebookinstagramyoutube
Youtstory

Brands

Resources

Stories

General

In-Depth

Announcement

Reports

News

Funding

Startup Sectors

Women in tech

Sportstech

Agritech

E-Commerce

Education

Lifestyle

Entertainment

Art & Culture

Travel & Leisure

Curtain Raiser

Wine and Food

YSTV

ADVERTISEMENT
Advertise with us

পার্কিনসনের সঙ্গে তা তা থৈ থৈ লড়াই সুমনদের

পার্কিনসনের সঙ্গে তা তা থৈ থৈ লড়াই সুমনদের

Sunday April 24, 2016 , 3 min Read

বয়স মধ্য তিরিশ। টগবগে তারুণ্যে শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়ানোর এই তো সময়। দু’হাতে শক্ত করে জীবনকে আঁকড়ে ধরার এই তো অবকাশ। জীবনের বাঁকে বাঁকে লুকিয়ে থাকা চ্যালে়ঞ্জকে আমনে সামনে লড়ে নেওয়ার এটাইতো মওকা। সুমন জানেন সময় বয়ে যাচ্ছে। আর একটু একটু করে চোখের সামনে রঙিন মুহূর্তগুলি ফিকে হয়ে আসছে ধীরে ধীরে। জীবনকে আঁকড়ে ধরা দূরে থাক দাঁড়িয়ে থাকার শক্তিটুকুও আর শরীর দিচ্ছে না। পার্কিনসন্সে আক্রান্ত সুমন মাত্র তিরিশ বছর বয়সেই সোজা হয়ে দাঁড়ানোর ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিলেন। কিছু ধরতে পারেন না। সব সময়ে হাত কাঁপে। বেশিক্ষণ দাঁড়াতেও কষ্ট হয়। কিন্তু জীবন যে থেমে থাকে না। থেমে থাকেননি সুমন, রিমা, টুকটুক, কুশল দা, মিতু মাসিরা।

image


এক হাতে লাঠি, অন্য হাতে জ্বলন্ত মোমবাতি নিয়ে এই পার্কিনসন রুগীরাই পা মেলালেন নাচের ছন্দে। এঁদের নিয়েই নাচের কর্মশালা করেছেন নৃত্যশিল্পী অলকানন্দা রায়। উদ্যোক্তা কলকাতার পার্কিনসন্স ওয়েলফেয়ার সোসাইটি। চিকিৎসকদের দাবি, নাচের এই কর্মশালা রোগীদের সুস্থ জীবনে ফিরতে কিছুটা সাহায্য করবে। অংশগ্রহণকারীরা বেশিরভাগই প্রবীণ। কর্মশালা চলাকালীন বেশিক্ষণ একটানা দাঁড়াতে পারছিলেন না । কিছুক্ষণ পরে চেয়ারে বসে পড়ছিলেন। বিশ্রাম নিয়ে আবার ছন্দের তালে মেতে উঠছিলেন নতুন উদ্যমে। ‘এক বছর পরে আমরা একটি অনুষ্ঠান করতে চাই। আপনাদের সবাইকে অংশগ্রহণ করতে হবে’, সাহস যোগান প্রশিক্ষক অলকানন্দা। কথাটা শোনার পরে নবীন-প্রবীন মানুষগুলির ক্লান্ত মুখে হাসি ফুটে উঠল।

image


দীর্ঘদিন ধরেই এই রোগে ভুগছেন পাথুরিয়াঘাটার পঙ্কজ রায়। ‘সারাদিন বাড়িতেই বসে থাকতাম। ভাল লাগত না। এখনও জীবনে অনেক কিছু বাকি আছে’,বলতে বলতে পঙ্কজবাবুর চোখে জলের রেখা চিক চিক করে ওঠে। বছর ছাব্বিশের অদিতি রায় বললেন, ‘জীবন এত তাড়াতাড়ি সব রং ছিনিয়ে নেবে মানতে পারতাম না। এখন মনে হচ্ছে সব শেষ হয়ে যায়নি’। নাচের মাধ্যমেই এই মানুষগুলিকে আবার সুস্থ জীবনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান অলকানন্দা রায়। বললেন, ‘নাচের মাধ্যমে রোগীরা যে মানসিক আনন্দ পাচ্ছেন, তাতে অসহায় মানুষগুলির মধ্যে নতুন করে বাঁচার আগ্রহ তৈরি হবে’।

সোসাইটির সম্পাদক মিত্রা সেন মজুমদার বলেন, ‘এই রোগের চিকিৎসা ব্যয়বহুল। থেরাপিগুলির জন্য যথেষ্ট অর্থের প্রয়োজন হয়। সবাইকে এক সঙ্গে করালে খরচ কম। সেটাই করার চেষ্টা করছি আমরা’। ‘পার্কিনসন্সের রোগীরা খুবই সংবেদনশীল হয়ে পড়েন। ফিজিওথেরাপি করতে পছন্দ করেন না। নাচের মধ্যে দিয়ে যেমন শারীরিক কসরত হবে, তেমন ওঁদের একঘেয়েমিও কাটবে’, সংযোজন মিত্রার।

বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, পার্কিনসন্স হল এক ধরনের স্নায়ুর রোগ। যার ফলে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে প্রভাব পড়ে। আক্রান্তদের প্রথমে চলাফেরায় সমস্যা দেখা যায়। খুব ধীরে ধীরে কাজ করেন। পরবর্তী সময়ে ব্যবহার ও চিন্তাভাবনায় অস্বাভাবিকতা দেখা যায়। বিষন্নতায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন রোগীরা। নাচের মাধ্যমে কী ভাবে শারীরিক অবস্থার উন্নতি হবে পার্কিনসন্স রোগীদের? চিকিৎসকেরা জানালেন, এই রোগে দেহের ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষমতা চলে যায়। নাচের মাধ্যমে শারীরিক ক্রিয়া বাড়ে। পেশির কসরত চলে। তাই শারীরিক সমতা রক্ষার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। রোগীদের সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

যাদের নাচের কর্মশালায় আনা হয়েছে তাঁরা সবাই কলকাতার ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস-এ চিকিৎসাধীন। সেখানকার চিকিৎসক হৃষিকেশ কুমারের মতে, ‘ভারতীয় নৃত্যশৈলীতে ব্যবহৃত মুদ্রাগুলি এই রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। তবে এই ধরনের কর্মশালার সময়ে চিকিৎসকের উপস্থিতি আবশ্যক। কারণ, রোগীর শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী নৃত্যভঙ্গী হওয়াটা প্রয়োজনীয়’।বয়স্কদের জন্য কতটা কার্যকরী এই থেরাপি? চিকিৎসক বললেন, ‘যাঁর যেমন বয়স, সেই অনুয়ায়ী তাঁর থেরাপি হবে। এ ক্ষেত্রে যে ধরনের মুদ্রার ব্যবহার করা হয়, সেগুলি রোগীর বয়স ও শারীরিক অবস্থার কথা মাথায় রেখেই’।

image


সুমন, রিমারা তো ধরেই নিয়েছিলেন, মধ্য যৌবনেই জীবন শেষ। সেই তাঁরাই এখন ফুটছেন মঞ্চ মাতাবেন বলে। বয়স যেন এক ধাক্কায় অনেকটাই কমে গিয়েছে কুশল দা, মিতু মাসিদেরও। কষ্ট হলেও মনে জোর পাচ্ছেন। নাচের প্র্যাকটিসে এতটুকু ফাঁকি নেই। ক্লান্তি আর মালুম হচ্ছে না। নাচের ছন্দে যে জীবনের নতুন বাঁক খুঁজে পেয়েছেন ওরা।